বসন্ত রোগের হোমিও চিকিৎসা

বসন্ত একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। এই রোগটি প্রধানত শীত ও বসন্তকালের সন্ধিক্ষনে হয়। অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময় এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কিন্তু এখন বসন্ত রোগটি প্রায় সবসময় সব ঋতুতেই এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এর আগমনের কোনও সঠিক সময় বা ক্ষন নেই। রোগটির যথাযথ চিকিৎসা না করালে এর ফল মারাত্মক হতে পারে।

বসন্ত রোগটি কি ?

বসন্ত রোগটি একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রামক রোগ। সাধারনত বসন্ত ২ ধরনের হয়। একটি হল জলবসন্ত (Chicken Pox) ও অপরটি হল গুটিবসন্ত (Small Pox)। তবে সাধারনত এখন যে বসন্ত রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় তা হল জলবসন্ত বা Chicken Pox । এই দুই প্রকার বসন্তের মধ্যে গুটিবসন্ত বা Small Pox হল সবচেয়ে মারাত্মক। তবে টীকাকরনের মাধ্যমে গুটি বসন্ত (Small Pox) রোগটি সম্পূর্ণ রুপে বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১৯৮০ সালে গুটিবসন্তের সারা বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির ঘোষণা করে।

গুটিবসন্ত (Small Pox) – এই ধরনের বসন্ত যে ভাইরাসের আক্রমনে হয় তা হল ভ্যারিওলা ভাইরাস (Variola Virus) । এক্ষেত্রে জ্বরের ২/৪ দিন পর শরীরে ফুসকুড়ি বেরোয়। ফুসকুড়ি হাতে, পায়ের তলায় ও মুখে সবচেয়ে বেশি বেরোয়। ১০১/১০২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার জ্বর ও সঙ্গে বমি হল এর প্রাথমিক লক্ষণ।

জলবসন্ত (Chicken Pox) – যে ভাইরাসের আক্রমনে এই রোগটি হয় তা হল ভেরিসেলা জোসটার ভাইরাস (Vericella Zoster Virus) । এই ধরনের বসন্তে শরীরে জ্বরের সাথে তীব্র চুলকানির সাথে সারা গায়ে ফুসকুড়ি বেরোয়। রোগীকে ২/৩ সপ্তাহ ভুগতে হয়।

যেহেতু গুটিবসন্ত পুরোপুরি ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাই এখানে জলবসন্তের সম্বন্ধে সমস্ত বিবরণ দেওয়া হল।

জলবসন্তের প্রাথমিক লক্ষন

জলবসন্তের প্রাথমিক লক্ষণ হল , প্রথমে শরীরের কিছু অংশে ২/৪ তে লাল ফুসকুড়ি বেরোবে। সঙ্গে জ্বর থাকবে, ক্ষুদামান্দ্য, সারা গা-হাত ব্যাথা ও সঙ্গে চুলকানি ও শরীর খুব দুর্বল মনে হবে। এই সব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন আপনি জলবসন্তে আক্রান্ত। এই সময় অনেকে ওষুধ খেয়ে ওই রোগ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। যা একেবারেই করনীয় নয়। উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে মৌরালা মাছের টক, ডাব বা মেথি ভেজানো জল রোগীকে খেতে দেবেন যাতে বসন্তের ফুসকুড়ি গুলো সম্পূর্ণ ভাবে বাহির হয়।

বসন্তের প্রতিষেধক ওষুধ (Anti pox medicine in homeopathy)

Variolinum , Vaccininum , Malandrinum এই তিনটি ওষুধ প্রধানত বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপরোক্ত ওষুধগুলির যেকোনো একটি ওষুধ ২ ফোঁটা মাত্রায় সকাল ও সন্ধ্যা খালি পেটে সেবন করলে আপনার শরীরে বসন্তের আক্রমনের সম্ভাবনা খুবই কম হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধটি ১ ফোঁটা করে সকাল ও সন্ধ্যায় খালি পেটে সেবন করা উচিৎ। এইভাবে ওষুধটি পরপর ৭ দিন সেবন করতে হবে।

বসন্ত রোগের হোমিও চিকিৎসা

বসন্ত রোগের হোমিও চিকিৎসা (Homeopathic medicine for chicken pox)

প্রথমাবস্থায় উচ্চজ্বরে,গায়ে ব্যাথা ও দুর্বলতায় – Baptisia Q

মাথাযন্ত্রণা, পিঠে ভীষণ ব্যাথা ও অস্থিরতায় – Cimicifuga 30

প্রচণ্ড সর্দি কাশি থাকলে প্রথমে Bryonia 30 ও পরে Antim Tart 30

গুটিতে পুঁজ ও জ্বরে – Marc Sol 30

মুখে লালা,গলক্ষত,দুর্গন্ধ থাকলে – Marc Vivus 30

মুখ ফোলা ও চুলকানি থাকলে – Sulphur 30 অথবা Apis mel 30

গুটি পচবার সময় – Arsenic Iod 30

মুখে, গলায় ঘা ও ব্যাথা – Rhus tox 30

মামড়ি ওঠার সময় – Kali sulph 30

আরোগ্য অবস্থায় শরীরের অত্যন্ত দুর্বলতা নিবারনের জন্য – China 30

আক্রান্ত অবস্থায় জ্বর থাকলে বায়োকেমিক ওষুধ Ferrum Phos 6xKali mur 6x পর্যায়ক্রমে সেবন করবেন।

সুস্থ হবার পর শরীর থেকে রস দূরীভূত করার জন্য প্রায় ২/৩ মাস Rhus tox 30 নিয়মিত সেবন করবেন।

আরও পড়ুনঃ চর্ম রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

প্রয়োজনীয় সাবধানতা

১) আক্রান্ত অবস্থায় কোনও ভাবে ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না।

২) কোনও প্রকার উত্তেজক খাদ্য আহার নিষিদ্ধ।

৩) যেহেতু এটা ভাইরাসঘটিত রোগ, তাই গুটি শুকিয়ে গেলে মামড়ি যত্রতত্র না ফেলে এক জায়গায় গুছিয়ে রাখা দরকার। পরে তা ফেলে দেবেন।

৪) শরীরে ভীষণ চুলকানি থাকলে বিছানায় নিমপাতা ছড়িয়ে রাখবেন। ফুসকুড়ি গুলি খোঁচাবার চেষ্টা করবেন না।

৫) বাড়ীতে কেউ বসন্তে আক্রান্ত হলে , বাকিদের বসন্তের প্রতিষেধক সেবন করা উচিৎ।

আরও পড়ুনঃ জ্বরের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *